৪০ হাজার লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে ব্যতিক্রমী সংগ্রহশালা গড়েছেন শুভদীপ সেনশর্মা

প্রহর প্রতিবেদন Link

আমাদের আর্থিক সম্বল খুব বেশি নেই। কোনোরকম সরকারি বা বে-সরকারি আর্থিক সাহায্য আমরা পাই না। কিন্তু এগুলোকে কোনোদিন প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হয়নি। বেশ তো দেখতে দেখতে ১০ বছরের উপর কেটে গেল।

বলছিলেন কাটোয়া লিটল ম্যাগাজিন আর্কাইভের নির্মাতা শুভদীপ সেনশর্মা।

২০১০ সালে যখন এই আর্কাইভ তৈরি করি, তখন এটি ছিল সম্পূর্ণ বর্ধমান জেলার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন আর্কাইভ।

 

শুরু থেকেই যাত্রাটা সহজ ছিল না। শুভদীপের কথায়, “এখন অবশ্য দৃশ্যটা অনেকটাই বদলেছে। কিন্তু কিছু বছর আগেও বাংলা সাহিত্য বলতেই একধরনের কলকাতা-কেন্দ্রিকতার প্রভাব নজরে আসত।

তার মধ্যেই শুরু হয় শহর থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। নিজের বাড়িতেই তিল তিল করে একটি সুনিপুণ সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন তিনি। দেখতে দেখতে তার কলেবর বেড়েছে অনেকটাই। “এখন আমার এখানে ৪০ হাজারের উপর বিভিন্ন পত্রিকার সংখ্যা রয়েছে। পাঠকদের সুবিধার জন্য কিছু কিছু সংখ্যাকে ডিজিটাল আর্কাইভের আওতাতেও নিয়ে আসা হয়েছে।” বলছিলেন শুভদীপ। “তবে এই ১০ বছরেও অন্য কোথাও সংগ্রহশালাটি স্থানান্তরিত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।”

কর্মসূত্রে সারা সপ্তাহ কলকাতাতেই থাকতে হয় শুভদীপকে। কিন্তু এই আর্কাইভের টানেই প্রত্যেক সপ্তাহান্তে পৌঁছে যান পূর্ব-বর্ধমান জেলার মফঃস্বল শহরটিতে। শনি ও রবিবার বিকালে তাঁর বাড়ির দরজা প্রত্যেকের জন্যই খোলা থাকে। কিন্তু মফঃস্বল শহরে এমন একটা উদ্যোগের কেমন সাড়া পাচ্ছেন শুভদীপ? সেটাও জানালেন নিজেই। “কোনো সপ্তাহেই কিন্তু আমার এই আর্কাইভ পাঠকশূন্য হয়ে থাকে না। আর কলকাতা শহরের বাইরে সাহিত্যের বাজার নেই, এ-কথা আমি কখনোই বিশ্বাস করব না।” জেলায় জেলায় নতুন নতুন সাহিত্যিকের জন্ম যেমন হচ্ছে, তেমনই সাহিত্যের পাঠকের সংখ্যাও বাড়ছে বলে মনে করছেন শুভদীপ। “আমি নিজে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, মানুষ দায়িত্বশীল কাজের প্রতি ক্রমশ আগ্রহী হচ্ছেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তৈরি লিটল ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যাগুলির চাহিদা মফঃস্বলেও নেহাৎ কম নয়।”

আর এই সমস্ত পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত মানুষরা, তাঁদের পাঠকদের কাছে এই আর্কাইভ যে এক স্বর্গরাজ্য— সে-কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে নিয়মিত পত্রিকা সংগ্রহের পাশাপাশি শুভদীপ জোর দিয়ে চলেছেন কাটোয়া শহর এবং দুই বর্ধমান জেলার বুকে গড়ে ওঠা নানা পত্রিকা উদ্যোগের উপর। শুভদীপ বলছিলেন, “নানা জায়গায় বহু পত্রিকার সম্পাদকদের নিয়মিত চিঠি লিখে পত্রিকা আনাতে হয়েছে একসময়। সবাই যে খুব আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, এমনটা নয়। কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া মানুষের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। সবার সহযোগিতা নিয়েই আগামীদিনে এই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলেই আশা করছি।” এভাবেই এগিয়ে চলুক কাটোয়ার লিটল ম্যাগাজিন আর্কাইভ। বাংলা সাহিত্য জগতের কলকাতা কেন্দ্রিকতার বাইরে বেরিয়ে এগিয়ে আসুক গ্রাম-মফঃস্বলও। আর কেবল উপযুক্ত সূত্রের অভাবে যাঁরা সার্থকভাবে সাহিত্যচর্চা করতে পারেন না, তাঁদের কাছে এই আর্কাইভের মূল্য অনেকটাই।


Post a Comment

0 Comments