ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তরুণ কবিকে পিটিয়ে হত্যা


নিমগ্ন পাঠক, ছোট কাগজের সম্পাদক, সংস্কৃতিকর্মী, প্রতিভাবান ছাত্রনেতা- এসব ছাড়িয়ে কবি হওয়ার প্রবল বাসনা ছিল সৈয়দ মুনাব্বির আহমেদ তননের। কবিদেরও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হয়, সেই কাজটিই করেছিলেন মুনাব্বির। এটাই কাল হলো তার জন্য। একটি সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির প্রতিবাদ করায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে একদল দুর্বৃত্ত।

সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের আলিয়ারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মুনাব্বির আহমেদ আলিয়ারা গ্রামের শিব্বির আহমেদের ছেলে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তরের ছাত্র ছিলেন। মুনাব্বির একাধারে সাংস্কৃতিক সংগঠন সৃজন সাহিত্য সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, পিতৃছায়া প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী এবং একুশে সৃজন ও দশ দিগন্ত নামে একটি সাপ্তাহিক লিটল ম্যাগের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিক্ষুব্ধ সংস্কৃতিকর্মীরা গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবাদ সভা করে দ্রুত দায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ নভেম্বর হরিপুর ইউনিয়নের আলিয়ারা গ্রামের ওসমান, মজনু ও মিল্লাত নামে কয়েক যুবক মাছ ধরার জন্য গ্রামের একটি সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে পানি নিস্কাশন বন্ধ করে দেয়। এতে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে মানুষের চলাচলে সমস্যা হয়। এর প্রতিবাদ করেন মুনাব্বির। এ নিয়ে ওসমানের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু মুনাব্বিরের প্রতিবাদ ও খালে বাঁধ দেওয়া নিয়ে সালিশ বৈঠকের বিষয়টি পছন্দ হয়নি ওসমান ও তার সহযোগীদের। পরিকল্পনা হয় মুনাব্বিরকে 'শায়েস্তা' করার। সোমবার বিকেলে ওসমানসহ তার সঙ্গে থাকা ১০-১৫ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুনাব্বিরের ওপর হামলা করে। তাকে পিটিয়ে জখম করে। এ সময় মুনাব্বিরকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে আরও তিনজন আহত হন। গুরুতর আহত মুনাব্বিরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আহত অন্যরা হলেন একই গ্রামের ফাইজুল, সুমন ও মুনাব্বিরের ছোট ভাই তন্ময়।

নাসিরনগর থানার পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, খালে বাঁধ দেওয়ার প্রতিবাদ করায় মুনাব্বিরকে পিটিয়ে হত্যা করে ওসমানসহ কয়েকজন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তোফাজ্জল নামে একজনকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে তরুণ সংস্কৃতিকর্মী সৈয়দ মুনাব্বির আহমেদকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মীরা। গতকাল সকাল ১০টায় সদর হাসপাতাল চত্বরে সমাবেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, তিতাস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের উপদেষ্টা দীপক চৌধুরী বাপ্পীর সভাপতিত্বে ও জেলা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকারের পরিচালনায় বক্তব্য দেন কবি মনির হোসেন, প্রবর্তক আবৃত্তি সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সোহেল আহাদ, লেখক ও গীতিকার গাজী তানভীর আহমেদসহ বিভিন্ন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা। তারা কবি মুনাব্বির আহমেদের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান৷


Post a Comment

1 Comments

  1. সানোয়ার বকসীNovember 11, 2020 at 4:12 PM

    এ ঘটনার তীব্র প্রতপবাদ করি৷ দোষীদের দ্রুত শাস্তি চাই৷

    ReplyDelete

মন্তব্যের দায় মন্তব্যকারীর, সম্পাদকের নয়।