ভাওয়াইয়া বিষয়ক প্রবন্ধটি কার: শফি ভাওয়াইয়া না কি আইয়ুব আল আমিন?


৩১ জুলাই (২০২১) জেলা শিল্পকলা একাডেমি- কুড়িগ্রামের সঙ্গীত প্রশিক্ষক ও বাংলাদেশ বেতার- রংপুরের সঙ্গীত পরিচালক এবং বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের কণ্ঠশিল্পী মোঃ শফিকুল ইসলাম শফি তার ফেসবুক একাউন্ট Shafi Vawaiya
“ভাওয়াইয়ার সেকাল একাল” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন৷ এর পরই কমেন্টে শুরু হয় প্রশ্ন, প্রবন্ধটি কার লেখা? অনেকে লিখেন, এটি আইয়ুব আল আমিনের লেখা৷ যিনি পেশায় একজন চিত্রশিল্পী৷ অনেকে মূল লেখার লিংক কমেন্টে পোস্ট করেন৷ ড. এরশাদুল হক কমেন্টে লিখেন, “রচনার উৎস উল্লেখ করা জরুরী। আপনার লেখাটা পড়লাম। আপনার লেখনীতে জনকণ্ঠের আর্স্টিট আইয়ুব আল আমিন ভাইয়ের লেখার সাথে অনেকাংশে মিল খুঁজে পেলাম। বুঝলাম না মৌলিক লেখাটি কার? জনকণ্ঠে প্রকাশিত লেখার লিংকটা নিচে দিলাম।” এই কমেন্টের উত্তরে জনাব শফি লিখেছেন, “ড. এরশাদুল হক, বিশেষ কোনো একই বিষয়ে তথ্য লিখতে গেলে কাকতালীয়ভাবে মিলে যেতে পারে সে কথাটি আপনি একজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী মানুষ হিসেবেও অস্বীকার করতে পারবেন না, আর আমি পুরোটা রচনা করেছি একথা কোথাও বলিনি, আমি বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে সহযোগিতা নিয়ে লিখলাম, আপনার লেখাও মিলে যেতে পারে খুঁজে দেখুন।” ড. এরশাদুল হক আবারও লিখেন, “Shafi Vawaiya অন্যের লেখা কোট করা অন্যায় কিছু না। কিন্তু অন্যায় হলো অন্যের লেখা লিখতে গিয়ে কোট না করা। আমিও অন্যের লেখা থেকে কোট করি তবে সেটা অবশ্যই উল্লেখ করি।”

Md. Sohel Rana কমেন্টে লিখেছেন, “শিল্পী হয়েও অন্যের লেখা চুরি করেন? 
আজব পাবলিক! কত সুন্দর বাহবা নিচ্ছে🙄
সামান্য কিছু অর্থ চুরি করলে চোরকে বেধড়ক পিডানো হয়, কিন্তু এসব চোরের ক্ষেত্রে কি করা যায়?” তিনি আরো লিখেন, “এরকম শিক্ষা আমি পাইনি, আর দরকারো নেই৷ ফালতু লোকে দেশ ভরে গেছে৷” এর উত্তরে জনাব শফি লিখেছেন, “আপনি এটা দেখে শিক্ষা নিন৷ পরবর্তি কাজে লাগবে৷”

শফি ভাওয়াইয়ার পোস্টে আনন্দ শংকর রায়চৌধুরী কমেন্ট করেছেন, “প্রচ্ছদশিল্পী আইয়ুব আল আমিনের  লেখাটি দারুণ৷” এর উত্তরে জনাব শফি লিখেছেন, “আনন্দ শংকর রায়চৌধুরী, হতে পারে ভাওয়াইয়া নিয়ে সবাই কাজ করুক এটা আমি চাই৷” আনন্দ শংকর আবারো কমেন্ট করেছেন, “Shafi Vawaiya কিন্তু আপনার লেখা এবং আইয়ুব আল আমিনের লেখা তো হুবহু এক।কপি করেছেন?” এই প্রশ্নের উত্তরে জনাব শফি লিখেছেন, “আনন্দ শংকর রায়চৌধুরী, ভাল করে পড়ুন। কাকতালিয় মিল হতেই পারে এটি পুরো আমার নয় বিভিন্ন তথ্যসুত্র থেকে নিচে উল্লেখ করেছি দেখুন।”

এরকম আরো অসংখ্য কমেন্ট রয়েছে জনাব শফির পোস্টে, যারা তাকে বারবার অনুরোধ করছেন অন্যের লেখা নিজের নামে প্রকাশ না করতে৷

জনকণ্ঠে প্রকাশিত আইয়ুব আল আমিনের লেখা

বিশিষ্ট ভাওয়াওয়া সংগীত শিল্পী জনাব শফিকুল ইসলাম শফি এই প্রবন্ধটি ফেসবুকে নিজের নামে পোস্ট করার কয়েক ঘন্টা পর চিত্রশিল্পী আইয়ুব আল আমিন ফেসবুকে প্রমাণসহ হাজির হন৷ তিনি দাবি করেন, এই প্রবন্ধটি তিনি রচনা করেন ২০১০ সালে। যা প্রথমে প্রকাশিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত সূর্য সারথি পত্রিকায়। পরে লেখাটি দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকাতে ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ সংখ্যায় ছাপা হয়৷ (জনকণ্ঠে লেখাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন৷) এই চিত্রশিল্পী তাঁর ফেসবুক একাউন্টে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন,
Shafi Vawaiya আপনি একজন শিল্পী।  আপনি গান করেন ভাওয়াইয়া। যেটা আমাদের মায়ের গান, মাটির গান। যার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, অনুভতি, ভালবাসা এবং গভীর মমতা। 
আপনি নিজেই বলেনও আপনি একজন ভাওয়াইয়া গবেষক, সাধক, শিল্পী এবং একনিষ্ঠ কর্মী।
অথচ করলেন কি!  চৌর্যবৃত্তি!!!

তিনি প্রচণ্ড হতবাক হয়েছেন বলে উল্লেখ করে লিখেছেন,
আমি প্রচন্ডভাবে হতবাক এবং মর্মাহত হলাম আপনার আজকের ‘ভাওয়াইয়া এর একাল সেকাল’ শিরোনামের লেখাটি দেখে।
আপনি আজকে হুবহু  আপনার ফেসবুক পেজে এবং আপনার প্রফাইলে নিজের রচনা বলে প্রকাশ করলেন।
এ কেমন সাধক আপনি? এ কেমন শিল্পী?

এই পোস্ট দেয়ার পর শুরু হয় নিন্দার ঝড়৷ অনেকে কমেন্টে নিন্দা জ্ঞাপন করেন৷ Muhammad Kamal Hossain লিখেছেন, “কালজয়ী হতে মরদ লাগে... 
আর এই সব যারা করেন তারা তো পরগাছা..... 
আপনি যে ধরতে পারছেন. সাবাশ... অন্যদের যাচ্ছে.... বা..শ..!” হানিফ মোহাম্মদ লিখেছেন, “হায় লজ্জা!” Aminur Rahman লিখেছেন, “ওরে বাটপার!!!” Chandan Haldar Tunku লিখেছেন, “এটা কে রে? এ আবার শিল্পী নাকি? ব্যাটা সাধু বেশী চোর 😡😡” Aneek Reza লিখেছেন, “ধিক্কার জানাই৷ ঘৃনা ৷” কিংবদন্তী পাবলিকেশনের প্রকাশক অঞ্জন হাসান পবন লিখেছেন, “কপি পেস্ট লেখক এরা।” Mohammad Kamruzzaman লিখেছেন, “এই সমস্ত পাইরাসি লেখকদের ...মারা উচিত৷ যে দক্ষতা আপনার নেই তা অর্জনের চেষ্টা করুন৷ কিন্ত কোনভাবেই চৌর্যবৃত্তি মেনে নেয়া যায়৷ আপনার জন্য একরাশ ঘৃণা৷” মুহসীন মোসাদ্দেক লিখেছেন, “সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো চুরি ধরা পড়ার পরও তিনি লজ্জিত নন, ভুল স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অপারগ এবং গলাবাজি ও হম্বিতম্বি করে যাচ্ছেন! আরও ফলাও করে তার এ চুরি প্রকাশ করা দরকার এবং এ লোকদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সকল মাধ্যম থেকে বয়কট করতে হবে।”

চারু প্রোডাকশনের পরিচালক Ferose Sarker লিখেছেন, “শফি ভাওয়াইয়া- কাজটি ঠিক হলো না বোধয়। আপনাকে চোর বল্লে আমরা লজ্জিত হই এটা আপনার বোঝা উচিত ছিলো।
গান গাইতেছিলেন ভালোই চলছিলো এপার—ওপার।
গান লিখতেছেন, প্রশিক্ষক সেও শ্রী।”

শফি ভাওয়াইয়া এবং আইয়ুব আল আমিন উভয়ের জন্মস্থান বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা ভাওয়াইয়া গানের ধাম কুড়িগ্রাম৷ তাই কুড়িগ্রামের লেখকদের গ্রুপেও এই বিষয়ে আলোচনা চলছে৷

Post a Comment

1 Comments

  1. বাংলাদেশী শিল্পীদের এহেন কাণ্ডে আমি লজ্জা পেলাম। ছি!

    ReplyDelete

মন্তব্যের দায় মন্তব্যকারীর, সম্পাদকের নয়।