(১)
জহির রায়হান (১৯ আগস্ট ১৯৩৫ — ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার। বাংলা সাহিত্যের গল্প শাখায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। চলচ্চিত্রে তার সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে মরণোত্তর বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
P.C: EPS |
(২)
কোলকাতায় ‘স্টপ জেনোসাইড’-এর প্রিমিয়ার দেখার পর মুগ্ধ সত্যজিৎ রায় জহির রায়হানকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। সত্যজিৎ রায় ভূয়সী প্রসংসা করে বলেছিলেন-শুধুমাত্র ‘স্টপ’ শব্দটি দিয়েই সে পুরো ব্যাপারটা থামাতে প্রয়াস নিয়েছিল এবং সেটা সে (জহির রায়হান) খুব ভালভাবে করতে পেরেছিল।
(৩)
“জহির রায়হান সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র কথা সাহিত্যিক যার উদ্ভবের পেছনে আছে ভাষা আন্দোলন, যদি বায়ান্ন’র একুশ না ঘটতো তবে জহির রায়হান হয়তো কথাশিল্পী হতেন না।”
–হুমায়ুন আজাদ
(৪)
জহির রায়হান যখন ক্লাস ফোরে পড়তেন তখন তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কুরিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। নেতাদের চিঠিপত্র পৌঁছে দিতেন, বিক্রি করতেন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র 'স্বাধীনতা পত্রিকা'। জহির রায়হানের আসল নাম ছিল জহির উল্লাহ। জহিরের পর রায়হান শব্দটি যুক্ত করে দিয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টি।
কমরেড মনি সিংহ জহির রায়হানের সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন-
“আমার জহিরের যেই স্মৃতিটা চোখে ভাসে তা হল, হাফ প্যান্ট পরা জহির... শার্টের বোতাম একটা খুলে গেছে, এক হাতে প্যান্টটা ধরে আছে এবং বগলে স্বাধীনতা পত্রিকা... এবং সেই অবস্থায় কোলকাতার রাস্তায় পার্টির জন্য স্বাধীনতা পত্রিকা বিক্রি করছে জহির।”
(৫)
সুমিতা দেবীর সাথে বিচ্ছেদের এক বছর পর জহির রায়হান একটা অসামান্য চিঠি লিখেছিলেন তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীকে। অত্যন্ত ব্যাক্তিগত ২৫ পৃষ্ঠার দীর্ঘ সে চিঠি!
সেই চিঠিতে উনি গদ্য লিখেছেন, কবিতা লিখেছেন, রাগছেন, বোঝাচ্ছেন, স্মৃতিচারণ করছেন। আমি এই চিঠিটা বহুবার পড়তে বসি। পড়তে এতো কষ্ট হয় যে কখনো শেষ করতে পারি না!
চিঠির শুরুতে জহির লিখছেন–
“মিঠু-বিপুলের মা,
অতীতকে ভুলে যাবার চেষ্টা করাটাই মূর্খতা।
অতীত ছিল বলেই তো বর্তমান আছে। ভবিষ্যৎ থাকবে।”
0 Comments
মন্তব্যের দায় মন্তব্যকারীর, সম্পাদকের নয়।